নিজস্ব প্রতিবেদক:
হঠাৎ বড় ধরণের দর পতন হয়েছে লবণের। প্রতিদিন ১০-২০ টাকা হারে কমে ১১০০ টাকার বস্তা এখন ৮০০ টাকায় ঠেকেছে।

তবে, মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম কমলেও বাজারে প্যাকেট লবণের দাম রয়ে গেছে ঠিকই আগের মতো। এমন কারসাজিতে লবণ চাষীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।

ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা না গেলে হুমকির মুখে পড়বে দেশীয় লবণশিল্প।

কক্সবাজার লবণ চাষী ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মকসুদ মিয়া বলেন, লবণ মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে মাঠ পর্যায়ে চাষীদেরকে দাম কমিয়ে দিচ্ছে। যে কারণে তারা ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আলু, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর বাজার ঊর্ধ্বমুখী। প্যাকেট লবণের বাজার ঠিকই রয়ে গেছে। সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না লবণচাষীরা।

তৃণমূলের লবণ চাষীরা জানিয়েছে, ইসলামপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ঝালকাঠিকেন্দ্রিক লবণ সিন্ডিকেট বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের সঙ্গে বিসিকের কিছু অসাধু কর্মকর্তারও হাত রয়েছে।

এই অবস্থা বজায় থাকলে আগামী লবণ মৌসুমে অনেক চাষীর মাঠে নামবে না বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্যে জানা যায়, নভেম্বর থেকে মে মাস হচ্ছে লবণ উৎপাদন মৌসুম। দেশে প্রতি মাসে লবণের চাহিদা থাকে দুই লাখ ১০ হাজার টন। ২০২৩ সালে দেশে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৩৩ হাজার টন।
২০২৩-২০২৪ মৌসুমে দেশে লবণের চাহিদা-২৫.২৮ লক্ষ মেঃটন। ২০২৩-২০২৪ মৌসুম শুরুতে মাঠ পর্যায়ে লবণ মজুদ ১.৬০ লক্ষ মেঃটন।
গত বছর দেশে মোট ৬৬ হাজার ৪২০ একর জমিতে লবণ চাষ হয়েছিল। চলতি বছর যার পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর (বিসিকের নিবন্ধিত)। এ হিসেবে চাষের জমি বেড়েছে দুই হাজার ৮১ একর। এছাড়া, চলতি বছর আবাদযোগ্য জমিতে মোট ৪০ হাজার ৬৯৫ জন কৃষক লবণ চাষ করছেন, যা গত বছরের চেয়ে এক হাজার ২২৮ জন বেশি।

লবণশিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামের বাঁশখালী,  পটিয়া, কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, ঈদগাঁও, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, এলাকায় সবচেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন হয়। ওই সব এলাকায় উৎপাদিত লবণ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৪০০ টাকা। ওখান থেকে খরচ যায় মন প্রতি ৫০ টাকার কাছাকাছি।

দেশের মুদি দোকান ও সুপার শপগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোক্তাপর্য়ায়ে এখন ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণ কেজিপ্রতি ৪২ টাকা, মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণ ২৫-৩০ টাকা ও সাধারণ লবণ ১৫-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিসিক লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় কক্সবাজারের উপ-মহাব্যবস্থাপক মু. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, অনেকে জমানো লবন উত্তোলন শুরু করেছে। সরবরাহ বেড়েছে। তাই দাম কমেতেছে। তবে অনেক মিল মালিক সুযোগ বুঝে ইচ্ছে করে দাম কমিয়ে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বিসিকের এই কর্মকর্তা বলেন, মাঠ পর্যায়ে দাম কমলে বাজারেও কমা দরকার।